১০ টি বাছাই করা কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা

5/5 - (2 votes)
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

১০ টি বাছাই কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা গুলো হলো – খাঁদু-দাদু, খুকি ও কাঠবেড়ালি, খোকার খুশি, ঝিঙে ফুল, ঠ্যাং-ফুলি, দিদির বে-তে খোকা, মা, লিচু চোর, হোঁদলকুতকুতের বিজ্ঞাপন ও প্রভাতি। কবিতা, নাটক ও উপনাস্যের মতো সাহিত্যের প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে তাঁর ছিলো অবাধ বিচরণ।

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা

কাজী নজরুল নিজেই লিখতেন গান, দিতেন সেইসব গানের সুর এবং সেইসাথে গাইতেন গানও। এছাড়াও পাশাপাশি সাংবাদিক হিসাবে ধরেছিলেন পেন এবং করেছিলেন নানা আন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের জন্য।

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা খাঁদু-দাদু

অ মা! তোমার বাবার নাকে কে মেরেছে ল্যাং?
খ্যাঁদা নাকে নাচছে ন্যাদা – নাক ডেঙাডেং ড্যাং!

ওঁর নাকটাকে কে করল খ্যাঁদা র‍্যাঁদা বুলিয়ে?
চামচিকে-ছা বসে যেন ন্যাজুড় ঝুলিয়ে!
বুড়ো গোরুর টিকে যেন শুয়ে কোলা ব্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং ড্যাং!

ওঁর খ্যাঁদা নাকের ছেঁদা দিয়ে টুকি কে দেয় ‘টু’!
ছোড়দি বলে সর্দি ওটা, এ রাম! ওয়াক! থুঃ!
কাছিম যেন উপুড় হয়ে ছড়িয়ে আছেন ঠ্যাং!
অ মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং ড্যাং!

দাদু বুঝি চিনাম্যান মা, নাম বুঝি চাং চু,
তাই বুঝি ওঁর মুখটা অমন চ্যাপটা সুধাংশু!
জাপান দেশের নোটিশ উনি নাকে এঁটেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং ডেং!

দাদুর নাকি ছিল না মা অমন বাদুড়-নাক,
ঘুম দিলে ওই চ্যাপটা নাকেই বাজত সাতটা শাঁখ।
দিদিমা তাই থ্যাবড়া মেরে ধ্যাবড়া করেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং ডেং!

লম্ফানন্দে লাফ দিয়ে মা চলতে বেজির ছা
দাড়ির জালে পড়ে জাদুর আটকে গেছে গা,
বিল্লি-বাচ্চা দিল্লি যেতে নাসিক এসেছেন!
অ মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং ডেং!

দিদিমা কি দাদুর নাকে টাঙতে ‘আলমানাক’
গজাল ঠুকে দেছেন ভেঙে বাঁকা নাকের কাঁখ?
মুচি এসে দাদুর আমার নাক করেছে ‘ট্যান’!
অ মা! আমি হেসে মরি, নাক ডেঙাডেং ড্যাং!

বাঁশির মতন নাসিকা মা মেলে নাসিকে,
সেথায় নিয়ে চলো দাদু দেখন-হাসিকে।
সেথায় গিয়ে করুন দাদু গরুড় দেবের ধ্যান,
খাঁদু-দাদু নাকু হবেন, নাক ডেঙাডেং ড্যাং।

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা খুকি ও কাঠবেড়ালি

কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও-

ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল?
দেখবি তবে? রাঙাদাকে ডাকবো? দেবে ঢিল!

পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাই তো তোর নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস
একলাই খাও হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!
ইস! খেয়ো না মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও!

কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি’ হবে? বৌদি হবে? হুঁ!
রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঃ!
এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো?
ফ্রকটা নেবে? জামা দুটো?
আর খেয়ো না পেয়ার তবে,
বাতাবি-নেবুও ছাড়তে হবে!
দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ ছুট? অ’মা দেখে যাও!-
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা খোকার খুশি

কী যে ছাই ধানাই-পানাই –
সারাদিন বাজছে সানাই,
এদিকে কারুর গা নাই
আজই না মামার বিয়ে!
বিবাহ! বাস, কী মজা!
সারাদিন মণ্ডা গজা
গপাগপ খাও না সোজা
দেয়ালে ঠেসান দিয়ে।

তবু বর হচ্ছিনে ভাই,
বরের কী মুশকিলটাই –
সারাদিন উপোস মশাই
শুধু খাও হরিমটর!
শোনো ভাই, মোদের যবে
বিবাহ করতে হবে –
‘বিয়ে দাও’ বলব, ‘তবে
কিছুতেই হচ্ছিনে বর!’

সত্যি, কও না মামা,
আমাদের অমনি জামা
অমনি মাথায় ধামা
দেবে না বিয়ে দিয়ে?
মামিমা আসলে এ ঘর
মোদেরও করবে আদর?
বাস, কী মজার খবর!
আমি রোজ করব বিয়ে॥

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা ঝিঙে ফুল

ঝিঙে ফুল! ঝিঙে ফুল।
সবুজ পাতার দেশে ফিরোজিয়া ফিঙে-কুল –
ঝিঙে ফুল।
গুল্মে পর্ণে
লতিকার কর্ণে
ঢলঢল স্বর্ণে
ঝলমল দোলো দুল –
ঝিঙে ফুল॥

পাতার দেশের পাখি বাঁধা হিয়া বোঁটাতে,
গান তব শুনি সাঁঝে তব ফুটে ওঠাতে।

পউষের বেলাশেষ
পরি জাফরানি বেশ
মরা মাচানের দেশ
করে তোলো মশগুল –
ঝিঙে ফুল॥

শ্যামলী মায়ের কোলে সোনামুখ খুকু রে,
আলুথালু ঘুমু যাও রোদে-গলা দুকুরে।
প্রজাপতি ডেকে যায় –
‘বোঁটা ছিঁড়ে চলে আয়!’
আশমানে তারা চায় –
‘চলে আয় এ অকূল!’
ঝিঙে ফুল॥

তুমি বলো – ‘আমি হায়
ভালোবাসি মাটি-মায়,
চাই না ও অলকায় –
ভালো এই পথ-ভুল!’
ঝিঙে ফুল॥

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা ঠ্যাং-ফুলি

হো-হো-হো উররো হো-হো!
হো-হো-হো উররো হো-হো
উররো হো-হো
বাস কী মজা!
কে শুয়ে চুপ সে ভুঁয়ে,
নারছে হাতে পাশ কী সোজা!

হো-বাবা! ঠ্যাং ফুলো যে!
হাসে জোর ব্যাংগুলো সে
ড্যাং তুলো তার
ঠ্যাংটি দেখে!
ন্যাং ন্যাং য়্যাগগোদা ঠ্যাং
আঁতকে ওঠায় ডানপিটেকে!
এক ঠ্যাং তালপাতা তার
যেন বাঁট হালকা ছাতার!
আর পাটা তার
ভিটরে ডাগর!
যেন বাপ! গোবদা গো-সাপ
পেট-ফুলো হুস এক অজাগর!

মোদোটার পিসশাশুড়ি
গোদ-ঠ্যাং চিপসে বুড়ি
বিশ্ব জুড়ি
খিসসা যাহার!
ঠে-ঠে ঠ্যাং নাক ডেঙা ডেং
এই মেয়ে কি শিষ্যা তাহার?
হাদে দেখ আসছে তেড়ে
গোদা-ঠ্যাং ছাঁতসে নেড়ে,
হাসছে বেড়ে
বউদি দেখে!
অ ফুলি! তুই যে শুলি
দ্যাখ না গিয়ে চৌদিকে কে!
বটু তুই জোর দে ভোঁ দৌড়,
রাখালে! ভাঙবে গোঁ তোর
নাদনা গুঁতোর
ভিটিম ভাটিম!
ধুমাধুম তাল ধুমাধুম
পৃষ্ঠে, – মাথায় চাটিম চাটিম!

‘ইতু’ মুখ ভ্যাংচে বলে –
গোদা ঠ্যাং ন্যাংচে চলে
ব্যাং ছা যেন
ইড়িং বিড়িং!
রাগে ওর ঠ্যাং নড়ে জোর
য়্যাদ্দেখেছিস – তিড়িং তিড়িং!

মলিনা! অ খুকুনি!
মা গো! কী ধুকপুকুনি
হাড়-শুগুনি
ভয়-তরাসে!
দেখে ইস ভয়েই মরিস
ন্যাংনুলোটার পাঁইতারাকে।

গোদা-ঠ্যাং পুঁচকে মেয়ে
আসে জোর উঁচকে ধেয়ে
কুঁচকে কপাল,
ইস কী রগড়!
লেলিয়ে দে ঢেলিয়ে!
ফোঁস করে ফের! বিষ কী জবর!
ইন্দু! দৌড়ে যা না!
হাসি, তুই বগ দেখা না!
দগ্‌ধে না!
তোল তাতিয়ে!
রেণু! বাস, রেগেই ঠ্যাঙাস,
বউদি আসুন বোলতা নিয়ে!

আর না খাপচি খেলো!
ওলো এ আচ্ছি যে লো,
নাচছি তো খুব
ঠ্যাং নিয়ে ওর!
ব্যাচারির হ্যাঁস-ফ্যাসানির
শেষ নেই, মুখ ভ্যাংচিয়ে জোর!

ধ্যাত! পা পিছলে যে সে
পড়ে তার বিষ লেগেছে
ইস! পেকেছে
বিষ-ফোঁড়া এক!
সে ব্যথায় ঠ্যাং ফুলে তাই
ঢাক হল পা-র পিঠ জোড়া দেখ!

আচ্ছু! সত্যি সে শোন
কারুর এক রত্তি সে বোন,
দোষ নেই এতে
দোষ নিয়ো না!
আগে তোর ঠ্যাং ফুলে জোর,
তারপরে না দস্যিপনা!

আয় ভাই আর না আড়ি,
ভাব কর কান্না ছাড়ি,
ঘাড় না নাড়ি,
কসনে ‘উহুঁ’!
লক্ষ্মী! ধ্যাত, শোক কী?
ছিঁচ-কাঁদুনে হসনে হুঁ হুঁ!
উষাদের ঘর যাবিনে?
লাগে তোর লজ্জা দিনে?
বজ্জাতি নে
রাখ তুলে লো!
কেন? ঠ্যাং তেড়েং বেড়েং?
হাসবে লোকে? বয়েই গেল!

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা দিদির বে-তে খোকা

‘সাত ভাই চম্পা জাগো’ –
পারুলদি ডাকল, না গো?
একী ভাই, কাঁদচ? – মা গো
কী যে কয় – আরে দুত্তুর!

পারায়ে সপ্ত-সাগর
এসেছে সেই চেনা-বর?
কাহিনির দেশেতে ঘর
তোর সেই রাজপুত্তুর?

মনে হয়, মণ্ডা মেঠাই
খেয়ে জোর আয়েশ মিটাই! –
ভালো ছাই লগাছে না ভাই,
যাবি তুই একেলাটি!

দিদি, তুই সেথায় গিয়ে
যদি ভাই যাস ঘুমিয়ে,
জাগাব পরশ দিয়ে
রেখে যাস সোনার কাঠি।

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা মা

যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই।

হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ,
মায়ের কোলেতে শুয়ে জুড়ায় পরান,
মায়ের শীতল কোলে
সকল যাতনা ভোলে
কত না সোহাগে মাতা বুকটি ভরান।
কত করি উৎপাত
আবদার দিন রাত,
সব সন হাসি মুখে, ওরে সে যে মা!
আমাদের মুখ চেয়ে
নিজে রন নাহি খেয়ে,
শত দোষে দোষী তবু মা তো ত্যজে না।

ছিনু খোকা এতটুকু,
একটুতে ছোটো বুক
যখন ভাঙিয়া যেত, মা-ই সে তখন
বুকে করে নিশিদিন
আরাম-বিরামহীন
দোলা দিয়ে শুধাতেন, ‘কী হল খোকন?’

আহা সে কতই রাতি
শিয়রে জ্বালায়ে বাতি
একটু অসুখ হলে জাগেন মাতা,
সবকিছু ভুলে গিয়ে
কেবল আমারে নিয়ে
কত আকুলতা যেন জগন্মাতা।

যখন জনম নিনু
কত অসহায় ছিনু,
কাঁদা ছাড়া নাহি জানিতাম কোনো কিছু,
ওঠা বসা দূরে যাক –
মুখে নাহি ছিল বাক,
চাহনি ফিরিত শুধু মা-র পিছু পিছু!

তখন সে মা আমার
চুমু খেয়ে বারবার
চাপিতেন বুকে, শুধু একটি চাওয়ায়
বুঝিয়া নিতেন যত
আমার কী ব্যথা হত,
বলো কে এমন স্নেহে বুকটি ছাওয়ায়!

তারপর কত দুখে
আমারে ধরিয়া বুকে
করিয়া তুলেছে মাতা দেখো কত বড়ো,
কত না সুন্দর
এ দেহ এ অন্তর
সব মোরা ভাই বোন হেথা যত পড়।

পাঠশালা হতে যবে
ঘরে ফিরি যাব সবে,
কত না আদরে কোলে তুলি নেবে মাতা,
খাবার ধরিয়া মুখে
শুধাবেন কত সুখে
‘কত আজ লেখা হল, পড়া কত পাতা?’

পড়ে লেখা ভালো হলে
দেখেছ সে কত ছলে
ঘরে ঘরে মা আমার কত নাম করে!
বলে, ‘মোর খোকামণি।
হিরা-মানিকের খনি,
এমনটি নাই কারও!’ শুনে বুক ভরে!

গা-টি গরম হলে
মা সে চোখের জলে
ভেসে বলে, ‘ওরে জাদু কী হয়েচে বল!’
কত দেবতার ‘থানে’
পিরে মা মানত মানে –
মাতা ছাড়া নাই কারও চোকে এত জল।

যখন ঘুমায় থাকি
জাগে রে কাহার আঁখি
আমার শিয়রে, আহা কীসে হবে ঘুম!
তাই কত ছড়া গানে
ঘুম-পাড়ানিরে আনে,
বলে, ‘ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম!’

দিবানিশি ভাবনা
কীসে ক্লেশ পাব না,
কীসে সে মানুষ হব, বড়ো হব কীসে;
বুক ভরে ওঠে মার
ছেলেরই গরবে তাঁর,
সব দুখ সুখ হয় মায়ের আশিসে।

আয় তবে ভাই বোন,
আয় সবে আয় শোন
গাই গান, পদধূলি শিরে লয়ে মা-র;
মার বড়ো কেউ নাই –
কেউ নাই কেউ নাই!
নত করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!’

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা লিচু চোর

বাবুদের তাল-পুকুরে
হাবুদের ডাল-কুকুরে
সে কি বাস করলে তাড়া,
বলি থাম একটু দাড়া।
পুকুরের ঐ কাছে না
লিচুর এক গাছ আছে না
হোথা না আস্তে গিয়ে
য়্যাব্বড় কাস্তে নিয়ে
গাছে গো যেই চড়েছি
ছোট এক ডাল ধরেছি,
ও বাবা মড়াত করে
পড়েছি সরাত জোরে।

পড়বি পড় মালীর ঘাড়েই,
সে ছিল গাছের আড়েই।
ব্যাটা ভাই বড় নচ্ছার,
ধুমাধুম গোটা দুচ্চার
দিলে খুব কিল ও ঘুষি
একদম জোরসে ঠুসি।
আমিও বাগিয়ে থাপড়
দে হাওয়া চাপিয়ে কাপড়
লাফিয়ে ডিঙনু দেয়াল,
দেখি এক ভিটরে শেয়াল!
আরে ধ্যাত শেয়াল কোথা?
ভেলোটা দাঁড়িয়ে হোথা!

দেখে যেই আঁতকে ওঠা
কুকুরও জুড়লে ছোটা!
আমি কই কম্ব কাবার
কুকুরেই করবে সাবাড়!
‘বাবা গো মা গো’ বলে
পাঁচিলের ফোঁকল গলে
ঢুকি গ্যে বোসদের ঘরে,
যেন প্রাণ আসল ধড়ে!
যাব ফের? কান মলি ভাই,
চুরিতে আর যদি যাই!
তবে মোর নামই মিছা!
কুকুরের চামড়া খিঁচা
সে কি ভাই যায় রে ভুলা-
মালির ঐ পিটুনিগুলা!
কি বলিস ফের হপ্তা!
তৌবা-নাক খপ্তা।

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা হোঁদলকুতকুতের বিজ্ঞাপন

মিচকে-মারা কয় না কথা মনটি বড়ো খুঁতখুঁতে।
‘ছিঁচকাঁদুনে’ ভ্যাবিয়ে ওঠেন একটু ছুঁতেই না ছুঁতে।
ড্যাবরা ছেলে ড্যাবড্যাবিয়ে তাকিয়ে থেকে গাল ফুলান,
সন্দেশ এবং মিষ্টি খেতে – বাসরে বাস – এক জাম্বুবান!
নিম্নমুখো-যষ্টি ছেলে দশটি ছেলে লুকিয়ে খান,
বদমায়েশির মাসি পিসি, আধখানা চোখ উঁচিয়ে চান!
হাঁদারা হয় হদ্দ বোকার, সব কথাতেই হাঁ করে!
ডেঁপো চতুর আধ-ইশারায় সব বুঝে নেয় ঝাঁ করে!
ভোঁদা খোকার নামটি ভুঁদো বুদ্ধি বেজায় তার ভোঁতা।
সব চেয়ে ভাই ইবলিশ হয় যে ছেলেদের ঘাড় কোঁতা।

পুঁয়ে-লাগা সুঁটকো ছেলে মুখটা সদাই মুচকে রয়!
পেটফুলো তার মস্ত পিলে, হাত-পাগুলোও কুঁচকে রয়!
প্যাঁটরা ছেলের য়্যাব্বড়ো পেট, হাত নুলো আর পা সরু!
চলেন যেন ব্যাংটি হো হো উ-র্ গজ-ঢাক গাল পুরু!
গাবদা ছেলের মনটি সাদা একটুকুতেই হন খুশি,
আদর করে মা তারে তাই নাম দিয়েছেন মনটুসি।
ষাঁড়ের নাদ সে নাদুস নুদুস গোবর-গণেশ যে শ্রীমান,
নাঁদার মতন য়্যাভ ভুঁড়ি তাঁর চলতে গিয়ে হুমড়ি খান!
ছ্যাঁচড় ছেলে বেদড় ভারি ধুমসুনি খায় সব কথায়।

উদমো ছেলে ছটফটে খুব একটুকুতেই উতপুতায়!
ফটকে ছেলে ছটকে বেড়ায় আঁটি তারা বজ্জাতের,
দুষ্টু এবং চুলবুলেরা সবখানে পায় লজ্জা ঢের।
বোঁচা-নাকা খাঁদা যে হয় নাম রেখো তার চামচিকে,
এসব ছেলে তেঁদড় ভারী ডরায় না দাঁত-খামচিকে!
টুনিখুকির মুখটি ছোটো টুনটুনি তার মন সরল,
ময়না-মানিক নাম যার ভাই মনটি তারও খুব তরল!
গাল টেবো যাঁর নাম টেবি তাঁর একটুকুতেই যান রেগে।
কান-খড়কে মায়ের লেঠা, রয় ঘুমুলেও কান জেগে।

খুদে খুকির নামটি টেপু মা-দুলালি আবদেরে।
ডর-পুকুনে আঁতকে ওঠে নাপতে দেখে আঁক করে!
পুঁটুরানি বাপ-সোহাগি, নন্দদুলাল মানিক মা-র,
দাদু বুড়োর ন্যাওটা যে ভাই মটরু ছাগল নামটি তার!
ভুতো ছেলে ঠগ বড়ো হয়, ভয় করে না কাউকে সে,
নাই পরোয়া যতই কেন কিল আর থাপড় দাও ঠেসে।
দস্যি ছেলে ভয় করে না চোখ-রাঙানি ভূত-পেরেত,
সতর-চোখি জুজুর খোঁজে বেড়িয়ে বেড়ায় রাত বিরেত!
ডানপিটেরা ঝুলঝাপপুর গুলি-ডাণ্ডায় মদ্দ খুব!
বাঁদরা-মুখোর ভ্যাংচিয়ে মুখ দাঁত খিঁচে বে-হদ্দ হুব!
বীর বাদল সে – দেশের তরে প্রাণ দিতে ভাই যে শিখে,
আনবে যে সাত-সাগর-পারের বন্দিনী দেশ-লক্ষ্মীকে!
কেউ যদি ভাই হয় তোমজদের এমনিতরো মর্দ ফেরো,
হো হো! তাকে পাঠিয়ে দেব বাচ্চা হোঁদল কুতকুতের!

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা প্রভাতি

ভোর হলো
দোর খোলো
খুকুমণি ওঠ রে!
ঐ ডাকে
জুঁই-শাখে
ফুল-খুকি ছোটরে!
খুকুমণি ওঠো রে!
রবি মামা
দেয় হামা
গায়ে রাঙা জামা ওই,
দারোয়ান
গায় গান
শোন ঐ, রামা হৈ!’
ত্যাজি নীড়
করে ভিড়
ওড়ে পাখি আকাশে,
এন্তার
গান তার
ভাসে ভোর বাতাসে।

চুলবুল
বুলবুল
শিস্ দেয় পুষ্পে,
এইবার
এইবার
খুকুমণি উঠবে!
খুলি হাল
তুলি পাল
ঐ তরী চললো,
এইবার
এইবার
খুকু চোখ খুললো।

আলসে
নয় সে
ওঠে রোজ সকালে
রোজ তাই
চাঁদা ভাই
টিপ দেয় কপালে।
উঠলো
ছুটলো
ওই খোকা খুকি সব,
”উঠেছে
আগে কে”
ঐ শোনো কলরব।
নাই রাত
মুখ হাত
ধোও, খুকু জাগো রে!
জয়গানে
ভগবানে
তুষি বর মাগো রে।

কাজী নজরুল ইসলাম ছোট কবিতা গুলো আপনার কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন যদি পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
WhatsApp Channel Join Now
Telegram Channel Join Now

Leave a Comment