কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা গুলি হলো – অবেলার ডাক, আশান্বিতা, উপেক্ষিত, আড়াল, চক্রবাক, তোমারে পড়িছে মনে, চিরন্তনী প্রিয়া, চৈতী হাওয়া, আশা ও গানের আড়াল। কাজী নজরুল ইসলাম বিদ্রোহী ও প্রেমিক কবি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যদিও তিনি স্বতন্ত্র ও বিশিষ্ট হয়ে আছেন তাঁর বিদ্রোহ ও প্রেম উভয়কে নিয়েই। নজরুল নিজেই তার কবিতায় বলেছেন, “মম এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাশরী আর হাতে রণতূর্য।”
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা
নজরুলের কাব্যগুলোরও দু’টি পর্যায় রয়েছে বিদ্রোহ ও প্রেম। একদিকে আছে তাঁর অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, প্রলয় শিখা ইত্যাদি। অন্যদিকে আছে দোলন চাঁপা, চক্রবাক, ছায়ানট, পুবের হাওয়া ইত্যাদি।
বিদ্রোহী কবি হিসেবে নজরুলের কবিতায় যে নতুনত্ব আমরা পাই প্রেমের ক্ষেত্রে তা পাই না একথা অনস্বীকার্য প্রেমিক কবি নজরুলের সঙ্গে বাংলা কাব্যের হাজার বছরের গীতি ধর্মিতা একটি অবিচ্ছেদ্য যোগসূত্র রয়েছে।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা অবেলার ডাক
অনেক ক’রে বাসতে ভালো পারিনি মা তখন যারে,
আজ অবেলায় তারেই মনে পড়ছে কেন বারে বারে।।
আজ মনে হয় রোজ রাতে সে ঘুম পাড়াত নয়ন চুমে,
চুমুর পরে চুম দিয়ে ফের হান্তে আঘাত ভোরের ঘুমে।
ভাব্তুম তখন এ কোন্ বালাই!
কর্ত এ প্রাণ পালাই পালাই।
আজ সে কথা মনে হ’য়ে ভাসি অঝোর নয়ন-ঝরে।
অভাগিনীর সে গরব আজ ধূলায় লুটায় ব্যথার ভারে।।
তর”ণ তাহার ভরাট বুকের উপ্চে-পড়া আদর সোহাগ
হেলায় দু’পায় দ’লেছি মা, আজ কেন হায় তার অনুরাগ?
এই চরণ সে বক্ষে চেপে
চুমেছে, আর দু’চোখ ছেপে
জল ঝ’রেছে, তখনো মা কইনি কথা অহঙ্কারে,
এম্নি দার”ণ হতাদরে ক’রেছি মা, বিদায় তারে।।
দেখেওছিলাম বুক-ভরা তার অনাদরের আঘাত-কাঁটা,
দ্বার হ’তে সে গেছে দ্বারে খেয়ে সবার লাথি-ঝাটা।
ভেবেছিলাম আমার কাছে
তার দরদের শানি- আছে,
আমিও গো মা ফিরিয়ে দিলাম চিন্তে নেরে দেবতারে।
ভিক্ষুবেশে এসেছিল রাজাধিরাজ দাসীর দ্বারে।।
পথ ভুলে সে এসেছিল সে মোর সাধের রাজ-ভিখারী,
মাগো আমি ভিখারিনী, আমি কি তাঁয় চিন্তে পারি?
তাই মাগো তাঁর পূজার ডালা
নিইনি, নিইনি মণির মালা,
দেব্তা আমার নিজে আমায় পূজল ষোড়শ-উপচারে।
পূজারীকে চিন্লাম না মা পূজা-ধূমের অন্ধকারে।।
আমায় চাওয়াই শেষ চাওয়া তার মাগো আমি তা কি জানি?
ধরায় শুধু রইল ধরা রাজ-অতিথির বিদায়-বাণী।
ওরে আমার ভালোবাসা!
কোথায় বেঁধেছিলি বাসা
যখন আমার রাজা এসে দাঁড়িয়েছিল এই দুয়ারে?
নিঃশ্বসিয়া উঠছে ধরা, ‘নেই রে সে নেই, খুঁজিস কারে!’
সে যে পথের চির-পথিক, তার কি সহে ঘরের মায়া?
দূর হ’তে মা দূরন-রে ডাকে তাকে পথের ছায়া।
মাঠের পারে বনের মাঝে
চপল তাহার নূপুর বাজে,
ফুলের সাথে ফুটে বেড়ায়, মেঘের সাথে যায় পাহাড়ে,
ধরা দিয়েও দেয় না ধরা জানি না সে চায় কাহারে?
মাগো আমায় শক্তি কোথায় পথ-পাগলে ধ’রে রাখার?
তার তরে নয় ভালোবাসা সন্ধ্যা-প্রদীপ ঘরে ডাকার।
তাই মা আমার বুকের কবাট
খুলতে নারল তার করাঘাত,
এ মন তখন কেমন যেন বাসত ভালো আর কাহারে,
আমিই দূরে ঠেলে দিলাম অভিমানী ঘর-হারারে।।
সোহাগে সে ধ’রতে যেত নিবিড় ক’রে বক্ষে চেপে,
হতভাগী পারিয়ে যেতাম ভয়ে এ বুক উঠ্ত কেঁপে।
রাজ ভিখারীর আঁখির কালো,
দূরে থেকেই লাগ্ত ভালো,
আসলে কাছে ক্ষুধিত তার দীঘল চাওয়া অশ্র”-ভারে।
ব্যথায় কেমন মুষড়ে যেতাম, সুর হারাতাম মনে তরে।।
আজ কেন মা তারই মতন আমারো এই বুকের ক্ষুধা
চায় শুধু সেই হেলায় হারা আদর-সোহাগ পরশ-সুধা,
আজ মনে হয় তাঁর সে বুকে
এ মুখ চেপে নিবিড় সুখে
গভীর দুখের কাঁদন কেঁদে শেষ ক’রে দিই এ আমারে!
যায় না কি মা আমার কাঁদন তাঁহার দেশের কানন-পারে?
আজ বুঝেছি এ-জনমের আমার নিখিল শানি–আরাম
চুরি ক’রে পালিয়ে গেছে চোরের রাজা সেই প্রাণারাম।
হে বসনে-র রাজা আমার!
নাও এসে মোর হার-মানা-হারা!
আজ যে আমার বুক ফেটে যায় আর্তনাদের হাহাকারে,
দেখে যাও আজ সেই পাষাণী কেমন ক’রে কাঁদতে পারে!
তোমার কথাই সত্য হ’ল পাষাণ ফেটেও রক্ত বহে,
দাবাললের দার”ণ দাহ তুষার-গিরি আজকে দহে।
জাগল বুকে ভীষণ জোয়ার,
ভাঙল আগল ভাঙল দুয়ার
মূকের বুকে দেব্তা এলেন মুখর মুখে ভীম পাথারে।
বুক ফেটেছে মুখ ফুটেছে-মাগো মানা ক’র্ছ কারে?
স্বর্গ আমার গেছে পুড়ে তারই চ’লে যাওয়ার সাথে,
এখন আমার একার বাসার দোসরহীন এই দুঃখ-রাতে।
ঘুম ভাঙাতে আস্বে না সে
ভোর না হ’তেই শিয়র-পাশে,
আস্বে না আর গভীর রাতে চুম-চুরির অভিসারে,
কাঁদাবে ফিরে তাঁহার সাথী ঝড়ের রাতি বনের পারে।
আজ পেলে তাঁয় হুম্ড়ি খেয়ে প’ড়তুম মাগো যুগল পদে,
বুকে ধ’রে পদ-কোকনদ স্নান করাতাম আঁখির হ্রদে।
ব’সতে দিতাম আধেক আঁচল,
সজল চোখের চোখ-ভরা জল-
ভেজা কাজল মুছতাম তার চোখে মুখে অধর-ধারে,
আকুল কেশে পা মুছাতাম বেঁধে বাহুর কারাগারে।
দেখ্তে মাগো তখন তোমার রাক্ষুসী এই সর্বনাশী,
মুখ থুয়ে তাঁর উদার বুকে ব’লত,‘ আমি ভালোবাসি!’
ব’ল্তে গিয়ে সুখ-শরমে
লাল হ’য়ে গাল উঠত ঘেমে,
বুক হ’তে মুখ আস্ত নেমে লুটিয়ে যখন কোল-কিনারে,
দেখ্তুম মাগো তখন কেমন মান ক’রে সে থাক্তে পারে!
এম্নি এখন কতই আমা ভালোবাসার তৃষ্ণা জাগে
তাঁর ওপর মা অভিমানে, ব্যাথায়, রাগে, অনুরাগে।
চোখের জলের ঋণী ক’রে,
সে গেছে কোন্ দ্বীপান-রে?
সে বুঝি মা সাত সমুদ্দুর তের নদীর সুদূরপারে?
ঝড়ের হাওয়া সেও বুঝি মা সে দূর-দেশে যেতে নারে?
তারে আমি ভালোবাসি সে যদি তা পায় মা খবর,
চৌচির হ’য়ে প’ড়বে ফেটে আনন্দে মা তাহার কবর।
চীৎকারে তার উঠবে কেঁপে
ধরার সাগর অশ্র” ছেপে,
উঠবে ক্ষেপে অগ্নি-গিরি সেই পাগলের হুহুঙ্কারে,
ভূধর সাগর আকাশ বাতাস ঘুর্ণি নেচে ঘিরবে তারে।
ছি, মা! তুমি ডুকরে কেন উঠছ কেঁদে অমন ক’রে?
তার চেয়ে মা তারই কোনো শোনা-কথা শুনাও মোরে!
শুনতে শুনতে তোমার কোলে
ঘুমিয়ে পড়ি। – ও কে খোলে
দুয়ার ওমা? ঝড় বুঝি মা তারই মতো ধাক্কা মারে?
ঝোড়ো হওয়া! ঝোড়ো হাওয়া! বন্ধু তোমার সাগর পারে!
সে কি হেথায় আসতে পারে আমি যেথায় আছি বেঁচে,
যে দেশে নেই আমার ছায়া এবার সে সেই দেশে গেছে!
তবু কেন থাকি’ থাকি’,
ইচ্ছা করে তারেই ডাকি!
যে কথা মোর রইল বাকী হায় যে কথা শুনাই কারে?
মাগো আমার প্রাণের কাঁদন আছড়ে মরে বুকের দ্বারে!
যাই তবে মা! দেকা হ’লে আমার কথা ব’লো তারে-
রাজার পূজা-সে কি কভু ভিখারিনী ঠেলতে পারে?
মাগো আমি জানি জানি,
আসবে আবার অভিমানী
খুঁজতে আমায় গভীর রাতে এই আমাদের কুটীর-দ্বারে,
ব’লো তখন খুঁজতে তারেই হারিয়ে গেছি অন্ধকারে!
নজরুলের প্রেমের কবিতা pdf
নজরুলের প্রেমের কবিতা pdf ডাউনলোড করার জন্য নিচের দেওয়া ডাউনলোড বক্সে ক্লিক করুন।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা আশান্বিতা
আবার কখন আসবে ফিরে সেই আশাতে জাগব রাত,
হয়তো সে কোন নিশুত রাতে ডাকবে এসে অকস্মাৎ!
সেই আশাতে জাগব রাত।
যতই কেন বেড়াও ঘুরে
মরণ-বনের গহন জুড়ে
দূর সুদূরে,
কাঁদলে আমি আসবে ছুটে, রইতে দূরে নারবে নাথ,
সেই আশাতে জাগব রাত।
কপট! তোমার শপথ-পাহাড় বিন্ধ্যসম হোক না সে,
ঝড়ের মুখে খড়ের মতন উড়বে তা মোর নিশ্বাসে!
একটি ছোট্ট নিশ্বাসে!
রাত্রি জেগে কাঁদছি আমি
শুনবে যখন, হে মোর স্বামি,
সুদূরগামী!
আগল ভেঙে আসবে পাগল, চুমবে সজল নয়ন-পাত,
সেই আশাতে জাগব রাত।
জানি সখা, আমার চোখের একটি বিন্দু অশ্রুজল,
নিববে তাতেই তোমার বুকের অগ্নি-সিন্ধু নীল গরল,
আমার চোখের অশ্রুজল!
তোমার আদর-সোহাগিনী
তাই তো কাঁদায় নিশিদিনই
এ অধীনী,
ভুলবে জানি তোমার রানি গরবিনীর সব আঘাত!
সেই আশাতে জাগব রাত।
আসবে আবার পদ্মানদী, দুলবে তরী ঢেউ-দোলায়,
তেমনি করে দুলব আমি তোমার বুকের পরকোলায়।
দুলবে তরী ঢেউ-দোলায়।
পাগ্লি নদী উঠবে খেপে,
তোমায় তখন ধরব চেপে
বক্ষ ব্যেপে,
মরণ-ভয়কে ভয় কি তখন, জড়িয়ে কণ্ঠ থাকবে হাত!
সেই আশাতে জাগব রাত।
পোড়া চোখের জল ফুরায় না, কেমন করে আসবে ঘুম?
মনে পড়ে শুধু তোমার পাতাল-গভীর মাতাল চুপ,
কেমন করে আসবে ঘুম?
আজ যে আমার নিশীথ জুড়ে
একলা থাকার কান্না ঝুরে
হতাশ সুরে,
পুবের হাওয়ায় সে সুর, আসবে পছিম হাওয়ার সাথ!
সেই আশাতে জাগব রাত।
বিজলি-শিখার প্রদীপ জ্বেলে ভাদর রাতের বাদল মেঘ,
দিগ্বিদিকে খুঁজছে তোমায় ডাকছে কেঁদে বজ্র-বেগ–
দিগ্বিদিকে খুঁজছে মেঘ!
তোমার আশায় ঐ আশা-দীপ
জ্বালিয়েছে আজ দিক ভরে নীপ,
হে রাজ-পথিক,
আজ না আসো, এসো যেদিন দীপ নিবাবে ঝন্ঝবাত!
সেই আশাতে জাগব রাত।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা উপেক্ষিত
কান্না-হাসির খেলার মোহে অনেক আমার কাটল বেলা,
কখন তুমি ডাক দেবে মা, কখন আমি ভাঙব খেলা?
অজানাকে আনতে জিনে
জগৎটাকে ফেলনু চিনে,
চাই যারে মা তায় দেখিনে
ফিরে এনু তাই একেলা
পরাজয়ের লজ্জা নিয়ে বক্ষে বিঁধে অবহেলা॥
আজকে বড় শ্রান্ত আমি আশায় আশায় মিথ্যা ঘুরে,
ও মা এখন বুকে ধরো মরণ আসে ঐ অদূরে!
সৃষ্টিটাকে পায়ের তলে
এসেছি মা হেলায় সলে,
হৃদয় শুধু জিনতে বলে
খেয়ে এনু পায়ের ঠেলা
আর সহে না মাগো এখন আমায় নিয়ে হেলাফেলা॥
বিশ্বজয়ের গর্ব আমার জয় করেছে ঐ পরাজয়,
ছিন্ন-আশা নেতিয়ে পড়ে, ও মা এসে দাও বরাভয়!
চারদিকে মা প্রবঞ্চনা
ভালোবাসার গিল্টিসোনা,
আজ মণি কাল ধূলি-কণা,
জুয়ার হাট এই প্রেমের মেলা!
খুইয়েছি সব সাধের খেলায়, বুক ভেঙেছে হেলার ঢেলা!
এখন তুমি নাও মা কোলে, নয় অকূলে ভাসাই ভেলা॥
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা আড়াল
আমি কি আড়াল করিয়া রেখেছি তব বন্ধুর মুখ?
না জানিয়া আমি না জানি কতই দিয়াছি তোমায় দুখ।
তোমার কাননে দখিনা পবন
এনেছিল ফুল পূজা-আয়োজন,
আমি এনু ঝড় বিধাতার ভুল – ভণ্ডুল করি সব,
আমার অশ্রু-মেঘে ভেসে গেল তব ফুল-উৎসব।
মম উৎপাতে ছিঁড়েছে কি প্রিয়, বক্ষের মণিহার?
আমি কি এসেছি তব মন্দিরে দস্যু ভাঙিয়া দ্বার?
আমি কি তোমার দেবতা-পূজার
ছড়ায়ে ফেলেছি ফুল-সম্ভার?
আমি কি তোমার স্বর্গে এসেছি মর্ত্যের অভিশাপ
আমি কি তোমার চন্দ্রের বুকে কালো কলঙ্ক-ছাপ?
ভুল করে যদি এসে থাকি ঝড়, ছিঁড়িয়া থাকি মুকুল,
আমার বরষা ফুটায়েছে অনেক অধিক ফুল!
পরায়ে কাজল ঘন বেদনার
ডাগর করেছি নয়ন তোমার,
কূলের আশায়, ভাঙিয়া করেছি সাত সাগরের রানি,
সে দিয়াছে মালা, আমি সাজায়েছি নিখিল সুষমা-ছানি।
দস্যুর মতো হয়তো খুলেছি লাজ-অবগুণ্ঠন,
তব তরে আমি দস্যু, করেছি ত্রিভুবন লুণ্ঠন!
তুমি তো জান না, নিখিল বিশ্ব
কার প্রিয়া লাগি আজিকে নিঃস্ব?
কার বনে ফুল ফোটাবার লাগি ঢালিয়াছি এত নীর,
কার রাঙা পায়ে সাগর বাঁধিয়া করিয়াছি মঞ্জীর।
তুমি না চাহিতে আসিয়াছি আমি – সত্য কি এইটুক?
ফুল ফোটা-শেষে ঝরিবার লাগি ছিলে না কি উৎসুক?
নির্মম-প্রিয়-নিষ্ঠুর হাতে
মরিতে চাহনি আঘাতে আঘাতে?
মরিতে চাহনি আঘাতে আঘাতে?
তুমি কি চাহনি কেহ এসে তব ছিঁড়ে দেয় গাঁথা-মালা?
পাষাণের মতো চাপিয়া থাকিনি তোমার উৎস-মুখে,
আমি শুধু এসে মুক্তি দিয়াছি আঘাত হানিয়া বুকে!
তোমার স্রোতেরে মুক্তি দানিয়া
স্রোতমুখে আমি গেলাম ভাসিয়া।
রহিবার যে – সে রয়ে গেল কূলে, সে রচুক সেথা নীড়!
মম অপরাধে তব স্রোত হল পুণ্য তীর্থ-নীর!
রূপের দেশের স্বপন-কুমার স্বপনে আসিয়াছিনু,
বন্দিনী! মম সোনার ছোঁয়ায় তব ঘুম ভাঙাইনু।
দেখ মোরে পাছে ঘুম ভাঙিয়াই,
ঘুম না টুটিতে তাই চলে যাই,
যে আসিল তব জাগরণ-শেষে মালা দাও তারই গলে,
সে থাকুক তব বক্ষে – রহিব আমি অন্তর-তলে।
সন্ধ্যা-প্রদীপ জ্বালায়ে যখন দাঁড়াবে আঙিনা-মাঝে,
শুনিয়ো কোথায় কোন তারা-লোকে কার ক্রন্দন বাজে!
আমার তারার মলিন আলোকে
ম্লান হয়ে যাবে দীপশিখা চোখে,
হয়তো অদূর গাহিবে পথিক আমারই রচিত গীত –
যে গান গাইয়া অভিমান তব ভাঙাতাম সাঁঝে নিতি।
গোধূলি-বেলায় ফুটিবে উঠানে সন্ধ্যামণির ফুল,
তুলসী-তলায় করিতে প্রণাম খুলে যাবে বাঁধা চুল।
কুন্তল-মেঘ-ফাঁকে অবিরল
অকারণে চোখে ঝরিবে গো জল,
সারা শর্বরী বাতায়নে বসি নয়ন-প্রদীপ জ্বালি
খুঁজিবে আকাশে কোন তারা কাঁপে তোমারে চাহিয়া খালি।
নিষ্ঠুর আমি – আমি অভিশাপ, ভুলিতে দিব না, তাই
নিশ্বাস মম তোমারে ঘিরিয়া শ্বসিবে সর্বদাই।
তোমারে চাহিয়া রচিনু যে গান
কণ্ঠে কণ্ঠে লভিবে তা প্রাণ,
আমার কণ্ঠে হইবে নীরব, নিখিল-কণ্ঠ-মাঝে
শুনিবে আমারই সেই ক্রন্দন সে গান প্রভাতে সাঁঝে!
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা গানের আড়াল
তোমার কন্ঠে রাখিয়া এসেছি মোর কন্ঠের গান —
এইটুকু শুধু রবে পরিচয় ? আর সব অবসান ?
অন্তরতলে অন্তরতর যে ব্যথা লুকায়ে রয়,
গানের আড়ালে পাও নাই তার কোনদিন পরিচয় ?
হয়তো কেবলি গাহিয়াছি গান, হয়ত কহিনি কথা,
গানের বানী সে শুধু কি বিলাস, মিছে তার আকুলতা ?
হৃদয়ে কখন জাগিল জোয়ার, তাহারি প্রতিধ্বনি
কন্ঠের তটে উঠেছে আমার অহরহ রণরণি’ —
উপকূলে ব’সে শুনেছ সে সুর, বোঝ নাই তার মানে ?
বেঁধেনি হৃদয়ে সে সুর, দুলেছে দু’ল হয়ে শুধু কানে ?
হায় ভেবে নাহি পাই —
যে – চাঁদ জাগালো সাগরে জোয়ার, সেই চাঁদই শোনে নাই ।
সাগরের সেই ফুলে ফুলে কাদা কূলে কূলে নিশিদিন ?
সুরেরে আড়ালে মূর্চ্ছনা কাঁদে, শোনে নাই তাহা বীণ ?
আমার গানের মালার সুবাস ছুঁল না হৃদয়ে আসি’ ?
আমার বুকের বাণী হল শুধু তব কন্ঠের ফাঁসি?
বন্ধু গো যেয়ো ভুলে —
প্রভাতে যে হবে বাসি, সন্ধায় রেখো না সে ফুল তুলে !
উপবনে তব ফোটে যে গোলাপ — প্রভাতেই তুমি জাগি’
জানি, তার কাছে যাও শুধু তার গন্ধ-সুষমা লাগি’ ।
যে কাঁটা লতায় ফুটেছে সে-ফুল রক্তে ফাটিয়া পড়ি’
সারা জনমের ক্রন্দন যার ফুটিয়াছে শাখা ভরি’
দেখ নাই তারে ! — মিলন মালার ফুল চাহিয়াছ তুমি,
তুমি খেলিয়াছ বাজাইয়া মোর বেদনার ঝুমঝুমি !
ভোল মোর গান, কি হবে লইয়া এইটুকু পরিচয়,
আমি শুধু তব কন্ঠের হার, হৃদয়ে কেহ নয় !
জানায়ো আমারে যদি আসে দিন, এইটুকু শুধু যাচি–
কন্ঠ পারায়ে হয়েছি তোমার হৃদয়ের কাছাকাছি !
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা চক্রবাক
এপার ওপার জুড়িয়া অন্ধকার
মধ্যে অকূল রহস্য-পারাবার,
তারই এই কূলে নিশি নিশি কাঁদে জাগি
চক্রবাক সে চক্রবাকীর লাগি।
ভুলে যাওয়া কোন জন্মান্তর পারে
কোন সুখ-দিনে এই সে নদীর ধারে
পেয়েছিল তারে সারা দিবসের সাথি,
তারপর এল বিরহের চির-রাতি, –
আজিও তাহার বুকের ব্যথার কাছে,
সেই সে স্মৃতি পালক পড়িয়া আছে!
কেটে গেল দিন, রাত্রি কাটে না আর,
দেখা নাহি যায় অতি দূর ওই পার।
এপারে ওপারে জনম জনম বাধা,
অকূলে চাহিয়া কাঁদিছে কূলের রাধা।
এই বিরহের বিপুল শূন্য ভরি
কাঁদিছে বাঁশরি সুরের ছলনা করি!
আমরা শুনাই সেই বাঁশরির সুর,
কাঁদি – সাথে কাঁদে নিখিল ব্যথা-বিধুর।
কত তেরো নদী সাত সমুদ্র পার
কোন লোকে কোন দেশে গ্রহ-তারকার
সৃজন-দিনের প্রিয়া কাঁদে বন্দিনী,
দশদিশি ঘিরি নিষেধের নিশীথিনী।
এ পারে বৃথাই বিস্মরণের কূলে
খোঁজে সাথি তার, কেবলই সে পথ ভুলে।
কত পায় বুকে কত সে হারায় তবু –
পায়নি যাহারে ভোলেনি তাহারে কভু।
তাহারই লাগিয়া শত সুরে শত গানে
কাব্যে, কথায়, চিত্রে, জড় পাষাণে,
লিখিছে তাহার অমর অশ্রু-লেখা।
নীরন্ধ্র মেঘ বাদলে ডাকিছে কেকা !
আমাদের পটে তাহারই প্রতিচ্ছবি,
সে গান শুনাই – আমরা শিল্পী কবি।
এই বেদনার নিশীথ-তমসা-তীরে
বিরহী চক্রবাক খুঁজে খুঁজে ফিরে
কোথা প্রভাতের সূর্যোদয়ের সাথে
ডাকে সাথি তার মিলনের মোহানাতে।
আমরা শিশির, আমাদের আঁখি-জলে
সেই সে আশার রাঙা রামধনু ঝলে।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা তোমারে পড়িছে মনে
তোমারে পড়িছে মনে
আজি নীপ-বালিকার ভীরু-শিহরণে,
যুথিকার অশ্রুসিক্ত ছলছল মুখে
কেতকী-বধূর অবগুন্ঠিত ও বুকে-
তোমারে পড়িছে মনে।
হয়তো তেমনি আজি দূর বাতায়নে
ঝিলিমিলি-তলে
ম্লান লুলিত অঞ্ছলে
চাহিয়া বসিয়া আছ একা,
বারে বারে মুছে যায় আঁখি-জল-লেখা।
বারে বারে নিভে যায় শিয়রেরে বাতি,
তুমি জাগ, জাগে সাথে বরষার রাতি।
সিক্ত-পক্ষ পাখী
তোমার চাঁপার ডালে বসিয়া একাকী
হয়ত তেমনি করি, ডাকিছ সাথীরে,
তুমি চাহি’ আছ শুধু দূর শৈল-শিরে ।।
তোমার আঁখির ঘন নীলাঞ্জন ছায়া
গগনে গগনে আজ ধরিয়াছে কায়া । …
আজি হেথা রচি’ নব নীপ-মালা–
স্মরণ পারের প্রিয়া, একান্তে নিরালা
অকারণে !-জানি আমি জানি
তোমারে পাব না আমি। এই গান এই মালাখানি
রহিবে তাদেরি কন্ঠে- যাহাদেরে কভু
চাহি নাই, কুসুমে কাঁটার মত জড়ায়ে রহিল যারা তবু।
বহে আজি দিশাহারা শ্রাবণের অশান্ত পবন,
তারি মত ছুটে ফেরে দিকে দিকে উচাটন মন,
খুঁজে যায় মোর গীত-সুর
কোথা কোন্ বাতায়নে বসি’ তুমি বিরহ-বিধুর।
তোমার গগনে নেভে বারে বারে বিজলীর দীপ,
আমার অঙ্গনে হেথা বিকশিয়া ঝরে যায় নীপ।
তোমার গগনে ঝরে ধারা অবিরল,
আমার নয়নে হেথা জল নাই, বুকে ব্যথা করে টলমল।
আমার বেদনা আজি রূপ ধরি’ শত গীত-সুরে
নিখিল বিরহী-কন্ঠে–বিরহিণী–তব তরে ঝুরে!
এ-পারে ও-পারে মোরা, নাই নাই কূল!
তুমি দাও আঁখি-জল, আমি দেই ফুল!
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা চিরন্তনী প্রিয়া
এসো এসো এসো আমার চির-পুরানো!
বুক জুড়ে আজ বসবে এসো হৃদয়-জুড়ানো!
আমার চির-পুরানো!
পথ বিপথে কতই আমার নিত্য নূতন বাঁধন এসে যাচে,
কাছে এসেই অমনি তারা পুড়ে মরে আমার আগুন আঁচে।
তারা এসে ভালোবাসার আশায়
একটুকুতেই কেঁদে ভাসায়,
ভীরু তাদের ভালোবাসা কেঁদেই ফুরানো।
বিজয়িনী চিরন্তনী মোর!
একা তুমিই হাস বিজয়-হাসি দীপ দেখিয়ে পথে ঘুরানো।
তুমি যেদিন মুক্তি দিলে হেসে বাঁধন কাটলে আপন হাতে,
প্রেম-গরবি আপন প্রেমের জোরে,
জানতে আমায় সইবে না কেউ বইবে না ভার
হার মেনে সে আসতে হবে আবার তোমার দোরে।
গরবিনি! গর্ব করে এই কপালে লিখলে জয়ের টিকা
‘চঞ্চল এই বাঁধন-হারায় বাঁধতে পারে এক এ সাহসিকা!’
প্রিয়! তাই কি আমার ভালোবাসা
সবাই বলে সর্বনাশা,
এই ধূমকেতু মোর আগুন-ছোঁয়া বিশ্ব-পোড়ানো?
সর্বনাশী চপল প্রিয়া মোর!
তবে অভিশাপের বুকে তুমিই হাসবে এসো
নয়ন ঝুরানো॥
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা চৈতী হাওয়া
হারিয়ে গেছ অন্ধকারে-পাইনি খুঁজে আর,
আজ্কে তোমার আমার মাঝে সপ্ত পারাবার!
আজ্কে তোমার জন্মদিন-
স্মরণ-বেলায় নিদ্রাহীন
হাত্ড়ে ফিরি হারিয়ে-যাওয়ার অকূল অন্ধকার!
এই -সে হেথাই হারিয়ে গেছে কুড়িয়ে-পাওয়া হার!
শূন্য ছিল নিতল দীঘির শীতল কালো জল,
কেন তুমি ফুটলে সেথা ব্যথার নীলোৎপল?
আঁধার দীঘির রাঙলে মুখ,
নিটোল ঢেউ-এর ভাঙলে বুক,-
কোন্ পূজারী নিল ছিঁড়ে? ছিন্ন তোমার দল
ঢেকেছে আজ কোন্ দেবতার কোন্ সে পাষাণ-তল?
অস্ত-খেয়ার হারামাণিক-বোঝাই-করা না’
আস্ছে নিতুই ফিরিয়ে দেওয়ার উদয়-পারের গাঁ
ঘাটে আমি রই ব’সে
আমার মাণিক কই গো সে?
পারাবারের ঢেউ-দোলানী হান্ছে বুকে ঘা!
আমি খুঁজি ভিড়ের মাঝে চেনা কমল-পা!
বইছে আবার চৈতী হাওয়া গুম্রে ওঠে মন,
পেয়েছিলাম এম্নি হাওয়ায় তোমার পরশন।
তেম্নি আবার মহুয়া-মউ
মৌমাছিদের কৃষ্ণ-বউ
পান ক’রে ওই ঢুল্ছে নেশায়, দুল্ছে মহুল বন,
ফুল-সৌখিন্ দখিন হাওয়ায় কানন উচাটন!
প’ড়ছে মনে টগর চাঁপা বেল চামেলি যুঁই,
মধুপ দেখে যাদের শাখা আপ্নি যেত নুই।
হাস্তে তুমি দুলিয়ে ডাল,
গোলাপ হ’য়ে ফুটতো গাল
থর্কমলী আঁউরে যেত তপ্ত ও-গাল ছুঁই!
বকুল শাখা-ব্যকুল হ’ত টলমলাত ভুঁই!
চৈতী রাতের গাইত’ গজল বুলবুলিয়ার রব,
দুপুর বেলায় চবুতরায় কাঁদত কবুতর!
ভুঁই- তারকা সুন্দরী
সজনে ফুলের দল ঝরি’
থোপা থোপা লা ছড়াত দোলন-খোঁপার’ পর।
ঝাজাল হাওয়ায় বাজত উদাস মাছরাঙার স্বর!
পিয়ালবনায় পলাশ ফুলের গেলাস-ভরা মউ!
খেত বঁধুর জড়িয়ে গলা সাঁওতালিয়া বউ!
লুকিয়ে তুমি দেখতে তাই,
বলতে, ‘আমি অমনি চাই!
খোঁপায় দিতাম চাঁপা গুঁজে, ঠোঁটে দিতাম মউ!
হিজল শাখায় ডাকত পাখি “ বউ গো কথা কউ”
ডাকত ডাহুক জল- পায়রা নাচত ভরা বিল,
জোড়া ভুর” ওড়া যেন আসমানে গাঙচিল
হঠাৎ জলে রাখত্ে পা,
কাজলা দীঘির শিউরে গা-
কাঁটা দিয়ে উঠত মৃণাল ফুটত কমল-ঝিল!
ডাগর চোখে লাগত তোমার সাগর দীঘির নীল!
উদাস দুপুর কখন গেছে এখন বিকেল যায়,
ঘুম জড়ানো ঘুমতী নদীর ঘুমুর পরা পায়!
শঙ্খ বাজে মন্দিরে,
সন্ধ্যা আসে বন ঘিরে,
ঝাউ-এর শাখায় ভেজা আঁধার কে পিঁজেছে হায়!
মাঠের বাঁশী বন্-উদাসী ভীম্পলাশী গায়অ
বাউল আজি বাউল হ’ল আমরা তফাতে!
আম-মুকুলের গুঁজি-কাঠি দাও কি খোঁপাতে?
ডাবের শীতল জল দিয়ে
মুখ মাজ’কি আর প্রিয়ে?
প্রজাপতির ডাক-ঝরা সোনার টোপাতে
ভাঙা ভুর” দাও কি জোড়া রাতুল শোভাতে?
বউল ঝ’রে ফ’লেছ আজ থোলো থোলো আম,
রসের পীড়ায় টস্টসে বুক ঝুরছে গোপাবজাম!
কামরাঙারা রাঙল ফের
পীড়ন পেতে ঐ মুখের,
স্মরণ ক’রে চিবুক তোমার, বুকের তোমার ঠাম-
জামর”লে রস ফেটে পড়ে, হায়, কে দেবে দাম!
ক’রেছিলাম চাউনি চয়ন নয়ন হ’তে তোর,
ভেবেছিলুম গাঁথ্ব মালা পাইনে খুঁজে ডোর!
সেই চাহনি নীল-কমল
ভ’রল আমার মানস-জল,
কমল-কাঁটার ঘা লেগেছে মর্মমূলে মোর!
বক্ষে আমার দুলে আঁখির সাতনরী-হার লোর!
তরী আমার কোন্ কিনারায় পাইনে খুঁজে কুল,
স্মরণ-পারের গন্ধ পাঠায় কমলা নেবুর ফুল!
পাহাড়তলীর শালবনায়
বিষের মত নীল ঘনায়!
সাঁঝ প’রেছে ঐ দ্বিতীয়ার-চাঁদ-ইহুদী-দুল!
হায় গো, আমার ভিন্ গাঁয়ে আজ পথ হ’য়েছে ভুল!
কোথায় তুমি কোথায় আমি চৈতে দেখা সেই,
কেঁদে ফিরে যায় যে চৈত-তোমার দেখা নেই!
কন্ঠে কাঁদে একটি স্বর-
কোথায় তুমি বাঁধলে ঘর?
তেমনি ক’রে জাগছে কি রাত আমার আশাতেই?
কুড়িয়ে পাওয়া বেলায় খুঁজি হারিয়ে যাওয়া খেই!
পারাপারের ঘাটে প্রিয় রইনু বেঁধে না’,
এই তরীতে হয়ত তোমার প’ড়বে রাঙা পা!
আবার তোমার সুখ-ছোঁওয়ায়
আকুল দোলা লাগবে না’য়,
এক তরীতে যাব মোরা আর-না-হারা গাঁ
পারাপারের ঘাটে প্রিয় রইনু বেঁধে না’।।
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা আশা
মহান তুমি প্রিয়
এই কথাটির গৌরবে মোর চিত্ত ভরে দিয়ো।
অনেক আশায় বসে আছি যাত্রা-শেষের পর
তোমায় নিয়েই পথের পারে বাঁধব আমার ঘর –
হে চির-সুন্দর!
পথ শেষ সেই তোমায় যেন করতে পারি ক্ষমা,
হে মোর কলঙ্কিনী প্রিয়তমা!
সেদিন যেন বলতে পারি, ‘এসো এসো প্রিয়,
বক্ষে এসো এসো আমার পূত কমনীয়!’
হায় হারানো লক্ষ্মী আমার! পথ ভুলেছ বলে
চির-সাথি যাবে তোমার মুখ ফিরিয়ে চলে?
জান ওঠে হায় মোচড় খেয়ে চলতে পড়ি টলে –
অনেক জ্বালায় জ্বলে প্রিয় অনেক ব্যথায় গলে!
বারে বারে নানান রূপে ছলতে আমায় শেষে,
কলঙ্কিনী! হাতছানি দাও সকল পথে এসে
কুটিল হাসি হেসে?
ব্যথায় আরো ব্যথা হানাই যে সে!
তুমি কি চাও তোমার মতোই কলঙ্কী হই আমি?
তখন তুমি সুদূর হতে আসবে ঘরে নামি –
হে মোর প্রিয়, হে মোর বিপথগামী!
পথের আজও অনেক বাকি,
তাই যদি হয় প্রিয় –
পথের শেষে তোমায় পাওয়ার যোগ্য করেই নিয়ো॥
কাজী নজরুল ইসলামের প্রেমের কবিতা গুলো আপনার কেমন লাগলো মন্তব্য করে জানাবেন যদি পোষ্টটি ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করতে ভুলবেন না।